bayyinaat

Published time: 11 ,May ,2017      19:53:48
প্রবন্ধ
‘১৫শাবানের রাত লাইলাতুল ক্বদরের পর সর্বোত্তম রাত। এ রাতে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ওপর অশেষ রহমত বর্ষণ ও স্বীয় অনুগ্রহে তাদের ক্ষমা করেন। আল্লাহ তাঁর সত্তার শপথ করে বলেছেন যে, এ রাতে কোন বান্দাকে তাঁর দ্বার থেকে ফিরিয়ে দিবেন না...
সংবাদ: 57

১৫ শাবানের রাতের আমলসমূহ

১৫ শাবানের রাত, অত্যন্ত পবিত্র ও বরকতময় রাত্রি। ইমাম বাকির (আ.) বলেন, ‘১৫শাবানের রাত লাইলাতুল ক্বদরের পর সর্বোত্তম রাত। এ রাতে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ওপর অশেষ রহমত বর্ষণ ও স্বীয় অনুগ্রহে তাদের ক্ষমা করেন। আল্লাহ তাঁর সত্তার শপথ করে বলেছেন যে, এ রাতে কোন বান্দাকে তাঁর দ্বার থেকে ফিরিয়ে দিবেন না ও তার বৈধ সকল চাওয়াকে পূরণ করবেন। মহান আল্লাহ তাঁর রাসূল (সা.)কে যেমন শবে কদর দিয়েছেন, তেমনি আমাদের এ রাত দানে সম্মানিত করেছেন।’ এ রাতের অন্যতম মহা বরকতময় বিষয় হল ইমাম মাহদী (আ.) এর জন্ম (তিনি ২৫৫হিজরিতে ইরাকের সামেররা’য় জন্মগ্রহণ করেন)।

এ রাত ‘লাইলাতুল বারাআত’ নামে পরিচিত যা বাংলাদেশে ‘শবে-বরাত’ নামে প্রশিদ্ধ।

 এ বরকতময় রাতের আমলের মধ্যে রয়েছে

১. গোসল করা যা গুনাহ মোচনের কারণ হয়।

২. ইমাম যাইনুল আবেদীন (আ.) এ রাতটি নামাজ, দোয়া ও ইসতিগফার করে কাটাতেন। হাদীসে বলা হয়েছে : যে ব্যক্তি এ রাতটি ইবাদতের মাধ্যমে কাটাবে তার অন্তর ওই দিন (কিয়ামতে) সজীব ও প্রাণবন্ত থাকবে যেদিন অন্যান্য অন্তরগুলো মৃত থাকবে।

৩. ইমাম হোসাইনের যিয়ারত যা এ রাতের সর্বোত্তম আমল বলে গণ্য। যেহেতু তা গুনাহ মাফের কারণ হয়। এ রাতে সকল নবি আসমান থেকে ইমাম হোসাইনের যিয়ারতে আসেন। যিয়ারতের সর্বনিম্ন পর্যায় হল কেআন উচুঁ স্থানে বা ছাদে দাঁড়িয়ে প্রথমে ডান ও বাম দিকে তাকাবে, অতঃপর আকাশের দিকে মুখ ইমাম হোসাইনের উদ্দেশে বলবে:

 اَلسَّلامُ عَلَیْكَ یا اَبا عَبْدِاللّهِ، اَلسَّلامُ عَلَیْكَ وَ رَحْمَةُاللّهِ وَ بَرَكاتُهُ

আসসালামু আলাইকা ইয়া আবা আবদিল্লাহ ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ।’

যে কেউ তাঁকে এভাবে যিয়ারত করবে তার জন্য একটি হজ ও উমরা’র সওয়াব লিখিত হবে।

৪. দোয়া কুমাইল পড়া যা এ রাতেই পড়তে বলা হয়েছে।

৫. ইমাম সাদিক (আ.) কে এ রাতের সর্বোত্তম দোয়া সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে বলেন:

‘এশা’র নামাজ পড়ার পর দুই রাকয়াত নামাজ এভাবে পড় যে, প্রথম রাকয়াতে সূরা ফাতিহা ও সূরা কাফিরূন পড় এবং দ্বিতীয় রাকয়াতে সূরা ফাতিহার পড় সূরা ইখলাছ (তওহীদ) পাঠ কর। অতঃপর ৩৩বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩বার আলহামদুলিল্লাহ ও ৩৪বার আল্লাহু আকবার বল।

৬. এ রাতে এ দুআ’টি পড়তে বলা হয়েছে:

اِلهى تَعَرَّضَ لَكَ فى هذَا اللَّیْلِ الْمُتَعَرِّضُونَ

হে মাবুদ, এ রাতে প্রার্থী ও কামনাকারী তোমার দরবারে এসেছে

وَ قَصَدَكَ الْقاصِدُونَ وَ اَمَّلَ فَضْلَكَ وَ مَعْرُوفَكَ الطّالِبُونَ

আগমনকারীরা তোমার অনুগ্রহ ও কল্যাণের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে তোমার দ্বারে উপনীত হয়েছে

وَ لَكَ فى هذَا اللّیْلِ نَفَحاتٌ وَ جَواَّئِزُ وَ عَطایا وَ مَواهِبُ تَمُنُّ بِها عَلى مَنْ تَشاَّءُ مِنْ عِبادِكَ

এ রাতে তোমার পক্ষ থেকে তুমি তোমার বান্দাদের মধ্য থেকে যার ওপর ইচ্ছা করবে তুমি অনুগ্রহ, পুরস্কার, দান ও করুণা বর্ষণ করবে।

وَ تَمْنَعُها مَنْ لَمْ تَسْبِقْ لَهُ الْعِنایَةُ مِنْكَ وَها اَنَا ذا عُبَیْدُكَ الْفَقیرُ اِلَیْكَ الْمُؤَمِّلُ فَضْلَكَ وَ مَعْرُوفَكَ

আর যাকে ইচ্ছা তুমি তোমার বিশেষ দৃষ্টি থেকে বঞ্চিত করবে। আর আমি তোমার ওই ক্ষুদ্র বান্দা যে তোমার অনুগ্রহ ও পুণ্যের মুখাপেক্ষী ও প্রত্যাশী। 

فَاِنْ كُنْتَ یا مَولاىَ تَفَضَّلْتَ فى هذِهِ اللَّیْلَةِ عَلى اَحَدٍ مِنْ خَلْقِكَ وَ عُدْتَ عَلَیْهِ بِعائِدَةٍ مِنْ عَطْفِكَ

হে আমার মাওলা (অভিভাবক) যদি এ রাতে তোমার কোন সৃষ্টির ওপর অনুগ্রহ কর ও তোমার দয়া ও করুণার থেকে পুরস্কার দাও।

فَصَلِّ عَلى مُحَمَّدٍ وَآلِ مُحَمَّدٍ الطَّیِّبینَ الطّاهِرینَ الْخَیِّرینَ الْفاضِلینَ

তবে মুহাম্মাদ ও তাঁর বংশের পবিত্র, নিষ্পাপ, মনোনীত ও শ্রেষ্ঠ পুরুষদের ওপর দরূদ প্রেরণ কর।

وَجُدْ عَلَىَّ بِطَولِكَ وَ مَعْرُوفِكَ یا رَبَّ الْعالَمینَ

হে জগতবাসীদের প্রভু, তোমার নেয়ামত ও পুণ্য থেকে আমার প্রতি অনুগ্রহ কর।

وَ صَلَّى اللّهُ عَلى مُحَمَّدٍخاتَمِ النَّبیّینَ وَ الِهِ الطّاهِرینَ وَ سَلَّمَ تَسْلیماً اِنَّ اللّهَ حَمیدٌ مَجیدٌ

এবং আল্লাহ শেষ নবি মুহাম্মাদ ও তাঁর নিষ্পাপ বংশধরদের ওপর রহমত প্রেরণ করুন ও তাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। নিশ্চয় আল্লাহ প্রশংসিত ও মর্যাদাময়।

اَللّهُمَّ اِنّى اَدْعُوكَ كَما اَمَرْتَ فَاسْتَجِبْ لى كَما وَعَدْتَ اِنَّكَ لا تُخْلِفُ الْمیعادَ.

হে আল্লাহ আমি আপনার নিকট দোয়া করছি যেরূপ আপনি নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং আমার দোয়া কবুল কর যেমনটি তুমি প্রতিশ্রুতি দিয়েছ। নিশ্চয় তুমি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ কর না।’

৭. মহানবি (সা.) যে দোয়াগুলি সিজদায় পড়তেন বলে বর্ণিত হয়েছে, সিজদায় সেগুলো পড়া। যেমন নিম্নোক্ত দোয়া

سَجَدَ لَكَ سَوادى وَ خَیالى وَ آمَنَ بِكَ فؤادى

 (হে আল্লাহ,) আমার সমগ্র অস্তিত্ব ও চিন্তাশক্তি তোমার জন্য সিজদাবনত হয়েছে; আমার হৃদয় ও অন্তঃকরণ তোমার ওপর ঈমান এনেছে।  

هذِهِ یَداىَ وَ ماجَنَیْتُهُ عَلى نَفْسى یا عَظیمُ [عَظیماً] تُرْجى لِكُلِّ عَظیمٍ اِغْفِرْ لِىَ الْعَظیمَ

আমার এ দু’হাত ও যা দ্বারা নিজের ওপর জুলুম করেছি হে ওই সত্তা যার নিকট সকল মহান কর্মের আশা করা হয়, আমার বড় গুনাহগুলোকে ক্ষমা কর।

فَاِنَّهُ لایَغْفِرُ الذَّنْبَ الْعَظیمَ اِلا الرَّبُّ الْعَظیمُ

নিশ্চয় মহান প্রভু ব্যতীত কেউ বড় গুনাহসমূহ ক্ষমা করে না।

অতঃপর মহানবি (সা.) সিজদাহ থেকে মাথা ওঠিয়ে পুনরায় সিজদায় গিয়ে বলতেন:

اَعُوذُ بُنُورِ وَجْهِكَ الَّذى اَضائَتْ لَهُ السَّمواتُ وَالاْرَضُونَ

আমি আপনার সত্তার সেই নূরের আশ্রয়য় চাই যার মাধ্যমে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীসমূহ আলোকিত হয়েছে

وَانْكَشَفَتْ لَهُ الظُّلُماتُ وَ صَلَحَ عَلْیْهِ اَمرُ الاْوَّلینَ وَالاْخِرینَ

যা দ্বারা অন্ধকারগুলো দূরীভূত হয়েছে এবং পূর্ববর্তী ও পরবর্তীদের কর্মগুলো সংশোধিত ও সম্পাদিত হয়েছে

مِنْ فُجاءَةِ نَقِمَتِكَ وَ مِنْ تَحْویلِ عافِیَتِكَ وَ مِنْ زَوالِ نِعْمَتِكَ

আশ্রয় চাই আকষ্মিকভাবে আপতিত আযাব থেকে, তোমার দেয়া সুস্থতা ও নিরাপত্তার পরিবর্তন ঘটা থেকে এবং তোমার নেয়ামত বিনষ্ট হওয়া থেকে 

اَللّهُمَّ ارْزُقْنى قَلْباً تَقِیّاً نَقِیّاً وَ مِنَ الشِّرْكِ بَریئاً لا كافِراً ولا شَقِیّاً

হে আল্লাহ, আমাকে জীবিকাস্বরূপ এমন অন্তর দান কর যা পবিত্র, পরিশুদ্ধ ও শিরক থেকে এমনভাবে মুক্ত যে অস্বীকারকারী ও হতভাগ্য হবে না।

তারপর তিনি (সা.) পালাক্রমে দু’গাল মাটিতে রেখে বলতেন:

عَفَّرْتُ وَجْهى فِى التُّرابِ وَ حُقَّ لى اَنْ اَسْجُدَ لَكَ.

আমি আমার মুখমণ্ডল মাটিতে রেখেছি এজন্য যে, আমার জন্য উপযুক্ত হল আপনার জন্যই সিজদা করব।

মন্তব্য দর্শকরা
নাম:
ই-মেল:
* অভিমত: