bayyinaat

Published time: 06 ,March ,2017      00:39:11
প্রবন্ধ
মুকাল্লিফকে অবশ্যই শরীয়তে নির্ধারিত প্রতিদিনের ধর্মীয় জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় বিধিবিধান যেমন, নামাজ, রোজা, পবিত্রতা, হজ, লেনদেন ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে হবে; বিশেষত ঐ সকল বিধান যা না জানলে কোন ওয়াজিব কাজ (যেমন নামাজ, রোজা, হজ, যাকাত ইত্যাদি) পরিত্যক্ত অথবা সঠিকভাবে সম্পাদিত না হওয়া অথবা হারামে (যেমন হারাম ব্যবসায়) পতিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তবে না শিখলে গুনাহগার হবে।
সংবাদ: 32

তাকলিদ কী?

 যে কোন বুদ্ধিমান ও আকলসম্পন্ন মানুষ তার প্রাত্যহিক জীবনে যে সকল বিষয়ে নিজে অবগত নয় বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হয়ে থাকে; তেমনিভাবে ধর্মীয় বিষয়েও যেহেতু সে বিশেষজ্ঞ নয় সেহেতু তাকে এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞের (মার্জায়ে তাকলিদ) শরণাপন্ন হতে হয়। এরূপ শরণাপন্ন হওয়াকেই ‘তাকলিদ’ বা অনুসরণ বলা হয়। সুতরাং বুদ্ধিবৃত্তিক দৃষ্টিতেই এ বিষয়টি প্রমাণিত হয় যে, এমন ব্যক্তি যার পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহর ওপর পূর্ণ্ দখল নেই ও এগুলো থেকে বিধান বের করতে অক্ষম, তার জন্য উচিৎ এ সম্পর্কে অবহিত ফকিহর অনুসরণ করা। এরূপ না করলে তার কাজ কোন রোগের ক্ষেত্রে প্রেসকিপশান ছাড়া ঔষধ সেবনের মত হবে, যা তাকে আরোগ্য দানের পরিবর্তে আরো অসুস্থ করে ফেলবে। দ্বীনি বিধানের ক্ষেত্রে প্রত্যেক মুমিনকে এ বিষয়টি নিশ্চিত হতে হবে যে, মহান আল্লাহ তার কাছে ঐশী বিধিবিধান ঠিক যেভাবে চেয়েছেন সেভাবে তা পালিত হচ্ছে কি না? তাই পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহ থেকে নামাজ, রোজা, হজ, যাকাত, জিহাদসহ সকল বিষয়ে খুঁটিনাটি আহকাম বের করতে হলে অবশ্যই ব্যক্তিকে কোরআনের আয়াতসমূহের শানেনুযুল, নাসিখ ও মানসুখ (রহিত ও রহিতকারী আয়াত), সার্বিক ও বিশেষায়িত বিধান, শর্ত্ যুক্ত ও শর্ত্ হীন আয়াত, আরবি ভাষা ও এর ব্যাকরণগত বিভিন্ন দিক, হাদীস, দিরায়া ও রিজালশাস্ত্র (সঠিক ও নির্ভুল হাদিস নিরূপণ ও হাদিসের টেস্ট থেকে তার উদ্দেশ্য হস্তগত করা, বিপরীত অর্থ্ যুক্ত হাদিসগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের পন্থা জানা) সম্পর্কে জানতে, মোটকথা ইজতিহাদের সকল যোগ্যতা থাকতে হবে। সেইসাথে মুজতাহিদকে তাকওয়ার অধিকারী ও ন্যায়পরায়ন হতে হবে, যা তাকে বিধান বের করার ক্ষেত্রে প্রবৃত্তির অনুসারী হওয়া থেকে বিরত রাখবে। ইমাম হাসান আসকারী (আ.) মার্জা হওয়ার জন্য আবশ্যক এ দুই বৈশিষ্ট্যের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছেন :

    «امّا من كان من الفقها صائناً لنفسه حافظاً لدینه مخالفاً على هواه مطیعاً لامر مولاه فللعوام أن یقلّدوه»

ফকিহদের (বিধিবিধানের বিষয়ে বিশেষজ্ঞ আলেমদের) মধ্যে যারা আত্মসংবরণকারী (আত্মসংযমী), স্বীয় ধর্মের বিধানের সংরক্ষণে ব্রত, স্বীয় প্রবৃত্তির কামনার বিরোধিতায় সক্ষম এবং তার প্রভু আল্লাহর নির্দেশের অনুগত (ও তাঁর সামনে আত্মসমর্পিত); সাধারণ্যের জন্য তার অনুসরণ করা অপরিহার্য্।

এ হাদিসে সাধারণ মানুষ ফকিহ পরিভাষার বিপরীতে ব্যবহৃত হয়েছে তাই এক্ষেত্রে ‘সাধারণ মানুষ’ বলার উদ্দেশ্য যারা ইসলামী জ্ঞানের ক্ষেত্রে পাণ্ডিত্যের অধিকারী নয় ও বিধিবিধানের বিষয়ে বিশেষজ্ঞ নয়। এ অর্থে এমন সকল ব্যক্তি যারা ধর্মীয় বিষয়ে গভীর জ্ঞান ও পাণ্ডিত্য রাখে না - যদিও সে জ্ঞানের অন্য কোন শাখায় বিশেষজ্ঞ হয়- সাধারণের অন্তর্ভুক্ত এবং তাকে ফকিহ আলেমের অনুসরণ করতে হবে। 

তাকলিদ ওয়াজিব হওয়ার তিনটি শর্ত:

১. মুকাল্লিফ হওয়া

২. মুজতাহিদ না হওয়া

৩. মুহতাত না হওয়া

মুকাল্লিফকে অবশ্যই শরীয়তে নির্ধারিত প্রতিদিনের ধর্মীয় জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় বিধিবিধান যেমন, নামাজ, রোজা, পবিত্রতা, হজ, লেনদেন ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে হবে; বিশেষত ঐ সকল বিধান যা না জানলে কোন ওয়াজিব কাজ (যেমন নামাজ, রোজা, হজ, যাকাত ইত্যাদি) পরিত্যক্ত অথবা সঠিকভাবে সম্পাদিত না হওয়া অথবা হারামে (যেমন হারাম ব্যবসায়) পতিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তবে না শিখলে গুনাহগার হবে।

মুকাল্লিফ হল সেই ব্যক্তি যার মধ্যে নিম্নোক্ত তিনটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে:

১. প্রাপ্ত বয়স্ক (শরীয়তে নির্ধারিত বয়সে উপনীত) হওয়া

২. বুদ্ধিসম্পন্ন হওয়া

৩. সক্ষম হওয়া

শরীয়তের দৃষ্টিতে বালেগ হওয়ার তিনটি চিহ্ন রয়েছে:

১. নাভির নিম্নভাগে (গুপ্তাঙ্গের চারিদিকে) পুরু লোম গজানো,

২. বীর্য্ স্খলন হওয়া,

৩. ছেলেদের ক্ষেত্রে ১৫ চন্দ্র বৎসর এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে ৯ চন্দ্র বৎসর পূর্ণ্ হওয়া

এ লক্ষণগুলোর যে কোনটি দেখা গেলেই বালেগ বলে গণ্য হবে, একসঙ্গে তিনটি লক্ষণ দৃষ্ট হওয়ার প্রয়োজন নেই। যেমন কোন কিশোর পনের বছরে উপনীত না হলেও যদি তার বীর্যপাত হয় তবে সে বালেগ। তবে কোন কিশোরী যদি নয় বছরের পূর্বে ঋতুস্রাব হয় সে বালেগ হয়েছে বলা যাবে না। কারণ নয় বছর পূর্ণ্ হওয়া তার বালেগ হওয়ার ন্যূনতম শর্ত্। আর তাই যতক্ষণ পর্য্ ন্ত এ চিহ্নগুলোর কোন একটি প্রকাশিত না হবে তাকে শরীয়তের দৃষ্টিতে বালেগ বলা যায় না এবং তার ওপর আহকাম পালনের দায়িত্ব বর্তাবে না।    

যেহেতু শরীয়তের দৃষ্টিতে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার সময় নির্ণ্ য়ের মানদণ্ড হল চন্দ্র বৎসর, সেহেতু সৌর বৎসরে বয়স জানা থাকলে সৌর বৎসর ও চন্দ্র বৎসরের ব্যবধান হিসাব করে সৌর বছরে বয়স থেকে তা থেকে বাদ দিতে হবে। চন্দ্র বৎসর সৌর বৎসর থেকে ১০ দিন ও ২১ ঘন্টা কম। এ হিসাবে চন্দ্র বৎসরের ১৫ বছর সৌর বছরের ১৪ বৎসর ও ২৬৭ দিন এবং চন্দ্র বৎসরের ৯ বৎসর সৌর বৎসরের ৮ বছর ও ২০৩ দিনের সমান।

বুদ্ধিসম্পন্ন হওয়ার অর্থ মোটামুটি সুস্থমস্তিষ্ক হওয়া এবং নির্বোধ ও পাগল না হওয়া; এ অর্থে বোকা মানুষও মুকাাল্লিফ।

সক্ষমতার অর্থ আহকাম পালন ও দ্বীনি দায়িত্ব সম্পাদনের জন্য শারীরিক ও মানসিক ক্ষমতা থাকা।

মুহতাত তাকে বলা হয় যে এমনভাবে বিধানগুলো সম্পাদন করে যাতে এটা নিশ্চিত হয় যে শরীয়তে বান্দার জন্য (লওহে মাহফুযে) নির্ধারিত দায়িত্ব পালন করেছে। কোন কোন মার্জার (আয়াতুল্লাহ মাকারেম ও আয়াতুল্লাহ মাজাহেরী) মতে যেহেতু এ কাজটি সাধারণ মানুষের জন্য সম্ভব নয়, এমনকি যে ব্যক্তি ইজতিহাদের কাছাকাছি পৌছেছে তার জন্যও কঠিন সেহেতু মুজতাহিদ ব্যতীত সকলের জন্য তাকলীদ করা আবশ্যক।

আহকাম বা বিধিবিধান জানার পথ

মুকাল্লিফ দ্বীনি বিধান সম্পর্কে জানার ও সে অনুযায়ী আমল করার জন্য তিনটি কাজ ও পন্থা অবলম্বন করতে পারে:

১. ইজতিহাদ করা: ইজতিহাদ অর্থ ফকীহদের কাছে স্বীকৃত শরীয়তের নিশ্চিত উৎস ও দলিলের ভিত্তিতে ঐশী বিধান ও আইন বের করা।

২. ইহতিয়াত ও সতর্কতা অবলম্বন : ইহতিয়াত অর্থ হল এমনভাবে আমল (বিধান পালন) করা যে, মুকাল্লিফ নিশ্চিত হবে যে তার ওপর আরোপিত শরয়ী দায়িত্ব পালন করেছে। যেমন: কোন কোন কাজ যদি একদল মুজতাহিদ হালাল বলে থাকেন ও অপর একদল তা হারাম বলে থাকেন তবে তা সতর্কতামূলক ভাবে হারাম গণ্য করে পরিত্যাগ করবে। তেমনি কোন কাজ যদি একদল মুজতাহিদ ওয়াজিব ও অপর দল ওয়াজিব নয় (বরং মুস্তাহাব বা মুবাহ) বলেন তবে তাকে তা ওয়াজিব হিসাবে গ্রহণ করে পালন করতে হবে।

ইহতিয়াতের উদাহরণ:

ক. যে ব্যক্তি জানে না বিশেষ অবস্থায় তার নামাজ পূর্ণ্ করতে হবে, না কি কছর করবে, এক্ষেত্রে তার জন্য ইহতিয়াত হল একবার নামাজ পূর্ণ্ পড়বে ও একবার কছর হিসাবে পড়বে।

খ. যদি কেউ না জানে আজান ও একামাহ বলা নামাজের পূর্বে ওয়াজিব না মুস্তাহাব, তাকে অবশ্যই আজান ও একামাহ বলতে হবে।

গ. যদি মুকাল্লিফ জানে যে, কোন একটি আমল ওয়াজিব নয়, কিন্তু না জানে তা হারাম অথবা মাকরুহ অথবা মুস্তাহাব অথবা মুবাহ; তবে সে তা ত্যাগ করবে। কারণ সম্ভাবনা রয়েছে ঐ কাজে আল্লাহর অসন্তুষ্টি রয়েছে।   

৩. তাকলিদ : তাকলিদ অর্থ্ দ্বীনি বিধানের ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ্ যোগ্যতাসম্পন্ন মুজতাহিদের শরণাপন্ন হওয়া; অন্য ভাষায় শরয়ীতের সকল শাখার বিধান সম্পর্কে জ্ঞাত মুজতাহিদের সিদ্ধান্ত ও ফতওয়া অনুযায়ী আমল করা।

বি: দ্র:

১. তাকলিদ ওয়াজিব হওয়ার সপক্ষে হাদিসের দলিল ছাড়াও বুদ্ধিবৃত্তিও নির্দেশ করে যে, যে ব্যক্তি দ্বীনের বিধান সম্পর্কে অনবগত সে ইজতিহাদের সকল শর্তসম্পন্ন মুজতাহিদের শরণাপন্ন হবে।

২. যে ব্যক্তি নিজে দ্বীনি বিধিবিধানের বিষয়ে মুজতাহিদ নয় তাকে অবশ্যই মুজতাহিদের অনসরণ করতে হবে অথবা ইহতিয়াত ও সতর্কতার নীতি গ্রহণ করবে।

৩. যে সকল ক্ষেত্রে সতর্কতার নীতি অবলম্বনে বিষয় ও দৃষ্টান্ত নির্ণয় করা আবশ্যক হওয়ায় সতর্কতার পথটি বের করা সময়সাপেক্ষ হয় সেক্ষেত্রে উত্তম হল মুকাল্লিদ ইজতিহাদের সকল শর্তসম্পন্ন মুজতাহিদের শরণাপন্ন হবে।

মাসআলা সম্পর্কিত শরীয়তের কিছু পরিভাষা

১. হারাম : এমন কোন কাজ যা করলে অথবা যা ত্যাগ করলে পবিত্র কোরআন ও সুন্নাতে জাহান্নামের শাস্তির কথা বলা হয়েছে, যেমন: মিথ্যা বলা, গিবত করা, অন্যের অর্থ্ –সম্পদ আত্মসাৎ করা, জুলুম করা, ব্যভিচার ও মদপান করা, নামাজ ত্যাগ করা ইত্যাদি।

২. মুস্তাহাব : এমন কাজ যা করা আবশ্যক নয় কিন্তু করলে সওয়াব পাওয়া যায় ও করা উত্তম ও প্রশংসনীয়, যেমন: সদকা দান।

৩. মাকরূহ : এমন কাজ যা ত্যাগ করা ভাল, তবে করলেও গোনাহগার হবে না; যেমন উত্তপ্ত খাবার খাওয়া ও গরম পানীয় ও খাদ্যে ফু দিয়ে খাওয়া।

৪. মুবাহ : এমন কাজ যা করা বা না করা সমান এবং তা করলেও যেমন সওয়াব নেই আবার না করলেও গোনাহ নেই; যেমন : ওঠা-বসা ও চলা-ফেরা করা।

৫. আযহার (اظهر) : কোন ফতওয়ার ক্ষেত্রে ফকিহ اظهر পরিভাষা ব্যবহার করলে তার অর্থ্ হল তার দৃষ্টিতে এটা দলিলের সাথে অধিকতর সামঞ্জস্যশীল এবং মুকাল্লিদকে অবশ্যই এ ফতওয়া অনুযায়ী আমল করতে হবে।

৬. আক্বরাব ও আক্বওয়া (اقرب و اقوی) : যে মতটি ফকিহের দৃষ্টিতে সত্যের অধিক নিকটবর্তী ও অন্য সব দলিলের থেকে অধিক শক্তিশালী তা হল আক্বরাব ও আক্বওয়া। এক্ষেত্রে মুকাল্লিদ ঐ বিধানের জন্য অন্য মার্জার শরণাপন্ন হওয়ার অধিকার রাখে না। বরং স্বীয় মার্জার মতানুযায়ী তাকে আমল করতে হবে। 

৭. ইহতিয়াতে ওয়াজিব : যদি মার্জায়ে তাকলীদ কোন বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে নিজের ফতওয়া বর্ণনা না করে ইহতিয়াত (সতকতা) অবলম্বন করার আবশ্যকতার (ওয়াজিব হওয়ার) কথা বলেন, তবে এ ইহতিয়াতকে ইহতিয়াতে ওয়াজিব বলা হয়। এরূপ ক্ষেত্রে মুকাল্লিদকে অবশ্যই হয় বর্ণিত সতকতার নীতিটি ওয়াজিব বলে গ্রহণ করে পালন করতে হবে অথবা ঐ বিষয়ে অন্য যে মার্জার (স্বীয় মার্জার পর সবচেয়ে জ্ঞানী মার্জার ক্রম বজায় রেখে) স্পষ্ট ফতওয়া রয়েছে (অর্থাৎ যিনি সতকতার নীতি অবলম্বন না করে সরাসরি বিধান বর্ণ্ না করেছেন) তার অনুসরণ করতে পারে। অন্যভাবে বললে, এ বিষয়ে তার এখতিয়ার ও স্বাধীনতা রয়েছে যে, নিজের মার্জার ইহতিয়াতকে মেনে চলা অথবা অন্য মার্জার স্পষ্ট ফতওয়ার অনুসরণ করার তবে শর্ত্ হল সে মার্জা তার মার্জার পরে সবচেয়ে জ্ঞানী হতে হবে। ইহতিয়াতে ওয়াজিবের ক্ষেত্রে বর্ণিত উদাহরণ :

১. যদি কেউ মানত করে কোন নির্দিষ্ট ফকিরকে সদকা দিবে, তবে তা অন্য ফকিরকে দিতে পারবে না, কিন্তু যদি ঐ ফকির মারা যায়, সেক্ষেত্রে ইহতিয়াত হল তার (উদ্দিষ্ট ফকিরের) উত্তরাধিকারীদের হাতে দিবে।

২. যদি কেউ এমন কোন বস্তু বা অর্থ্ পড়ে পায় যার (মূল্য খুব বেশি নয় ও) মালিক অজ্ঞাত ও কোন চিহ্নও তাতে নেই যা দেখে তার খোঁজ পাওয়া যায়, তবে ইহতিয়াতে ওয়াজিব হল তার মালিকের পক্ষ থেকে তা সদকা দিয়ে দিবে।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: কোন বিধান বর্ণনার ক্ষেত্রে যদি ফকিহ ‘যেন ইহতিয়াত ত্যাগ না করা হয়’ অথবা ‘এক্ষেত্রে সমস্যা আছে’ অথবা ‘বিষয়টি বিবেচনা সাপেক্ষ’ অথবা ‘বিষয়টি সমস্যাযুক্ত’ এরূপ পরিভাষা ব্যবহার করেন; তবে তার উদ্দেশ্য হল, বিষয়টি ইহতিয়াতে ওয়াজিব। আবার যখন কোন ফকিহ স্পষ্ট ফতওয়া দেয়ার জন্য শক্তিশালী প্রমাণ ও দলিল না পান এবং এ ক্ষেত্রে তার মতে উসূল শাস্ত্রের ইহতিয়াত ও সতকতার নীতি প্রয়োগ হওয়া বাঞ্ছনীয়, তিনি «احوط» পরিভাষা ব্যবহার করেন, সেক্ষেত্রেও বিষয়টি ইহতিয়াতে ওয়াজিব।

যখন কোন ফকিহর বর্ণিত বিধানের মধ্যে পূর্বে ও পরে ইহতিয়াত পরিভাষাটি ব্যবহার না করে (لا يَخْلوُ مِنْ قُوَّةٍ) ‘এ মতটি শক্তিশালী দলিলবিহীন নয়), «لا يَبْعُدُ»এ মতটি সত্য থেকে দূরে নয়’, «الْاحْوَطُ الاقْوى»এ মতটি ইহতিয়াতের দৃষ্টিতে অধিক শক্তিশালী’, «لا يَخْلُو مِنْ وَجْهٍ»এ মতটি সঠিক হওয়া অসম্ভব নয়’ ইত্যাদি মন্তব্য থাকে, তবে তা ফকিহের স্পষ্ট ফতওয়া বলে গণ্য হবে, তা ইহতিয়াতের অন্তর্ভুক্ত হবে না।    

৮. ইহতিয়াতে মুস্তাহাব : যে ক্ষেত্রে মার্জায়ে তাকলীদ প্রথমে নিজের মত ও ফতওয়া বর্ণনা করার পর ইহতিয়াত অবলম্বন পূর্ব্ক কিছু করতে বলেন, তবে এরূপ ইহতিয়াতকে ইহতিয়াতে মুস্তাহাব বলা হয়। এক্ষেত্রে মুকাল্লিদের জন্য ইহতিয়াতের বিষয়টি আমল করা উত্তম বলে গণ্য হবে ও তা করলে সওয়াবের অধিকারী হবে, তবে সেটা না করলেও গোনাহগার হবে না। ইহতিয়াতে মুস্তাহাবের ক্ষেত্রে মুকাল্লিদের অন্য মার্জার শরণাপন্ন হওয়ার অধিকার নেই। তাই হয় তাকে প্রথমেই তার মার্জা যে ফতওয়া দিয়েছেন সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে অথবা ইহতিয়াত অবলম্বন পূর্ব্ ক যা করতে বলেছেন তা করতে হবে। ইহতিয়াতে মুস্তাহাবের ক্ষেত্রে উদাহরণ:

১. ইরতিমাসি বা ডুব দিয়ে গোসলের ক্ষেত্রে যদি কেউ গোসলের নিয়ত করে ধীরে ধীরে পানির মধ্যে নিজেকে এমনভাবে নিমজ্জিত করে যে সমগ্র দেহ পানির নিচে চলে যায়, তবে তার গোসল সঠিক ও সহিহ বলে গণ্য হবে; কিন্তু ইহতিয়াত হল সমস্ত দেহ একবারে পানিতে নিমজ্জিত করবে।

২. নামাজে জামাআতের ইমাম তাকবির বলার পর যদি প্রথম সারির মুক্তাদিরা নামাজের জন্য প্রস্তুত থাকে ও তাকবির বলার উপক্রম করে, পরবর্তী কাতার ও সারির লোকেরা তাকবির বলতে পারবে, তবে ইহতিয়াতে মুস্তাহাব হল প্রথম সারির লোকেরা তাকবির বলা শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা।

বিশেষ দ্রষ্টব্য : যেক্ষেত্রে ফকিহ কোন বিষয়ে স্পষ্ট ফতওয়া দিলেও যেহেতু তার বিপরীত ফতওয়ার মধ্যে সতকতা রয়েছে সেহেতু তিনি «احوط» বা ‘অধিকতর সতর্ক্ তা হল’ পরিভাষাটি ব্যবহার করেন; এক্ষেত্রে তার উদ্দেশ্য ইহতিয়াতে মুস্তাহাব।

হুকম’ ও ‘ফতওয়া’ এ দুই পরিভাষার মধ্যে পার্থক্য

১. ‘ফতওয়া’ ফকিহদের পরিভাষায় বিশেষজ্ঞ ফকিহ কর্তৃক আল্লাহর বিধান বর্ণিত হওয়া। আর ফকিহ হল সেই ব্যক্তি যে ফিকাহ শাস্ত্রের স্বীকৃত উৎসের (অর্থাৎ কোরআন, সুন্নাহ, আকল এবং এমন ইজমা যা মাসুম ইমামদের হাদিসের থেকে উৎসারিত ও মতের নির্দেশক) ভিত্তিতে কোন বিষয়ে মত দান করে থাকেন। ফতওয়ার উদাহরণ :

ক. নামাজের তৃতীয় ও চতুর্থ্ রাকআতে একবার ‘তাসবিহাতে আরবাআ’ (সুবহানাল্লাহে ওয়াল হামদু লিল্লাহে ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহে আল্লাহু আকবার) বলা যথেষ্ট।

খ. যদি কেনার ক্ষেত্রে ক্রেতা প্রতারিত হয়ে থাকে তবে তার অধিকার রয়েছে ক্রয়কে বাতিল করার…

২. ‘হুকম’ হল শরীয়তের বৈধ শাসক ও ফকিহ আলেম কর্তৃক কোন ধর্মীয় বা রাষ্ট্রীয় বিধানকে কার্য্ কর ও বাস্তবায়নের স্থান অথবা সময় অথবা তার বিষয়বস্তু ও দৃষ্টান্তকে নির্ধারণ করা এবং কল্যাণ চিন্তার ভিত্তিতে কোন কাজকে সম্পাদন অথবা পরিত্যাগের আবশ্যকতা ঘোষণা। উদাহরণ :

ক. ফকিহ ঘোষণা করলেন : অমুক দিন রমজান মাসের প্রথম দিন।

খ. ফকিহ  নির্দেশ  দিলেন : বিশেষ অবস্থার কারণে বিশেষ দিন, স্থান ও সময়ে যাকাত অথবা খোমস দিতে হবে।

গ. অমুক বস্তুর মূল্য এত নির্ধারণ করা হল অথবা অমুক পণ্যের অবৈধ মজুত বাজেয়াপ্ত ও পণ্যটি সরকারী মালিকানায় নেয়া হল।

ঘ. ধর্মীয় দণ্ডবিধি কার্য্ কর করা; যেমন, চুরি ও ব্যভিচারের শাস্তিদান।

ফতওয়া ও হুকমের মধ্যে পার্থক্য

যদি কোন ক্ষেত্রে মারজায়ে তাকলিদের ফতওয়া ও ওয়ালিয়ে ফকিহর হুকমের মধ্যে বৈপরীত্য দেখা যায় তবে অবশ্যই ওয়ালিয়ে ফকিহর হুকম প্রাধান্য পাবে এবং তার বিরোধিতা করা হারাম। যেমন যদি কোন ফকিহ বলেন খাদ্যদ্রব্য ভিন্ন অন্য কোন পণ্য মজুত করে রাখাতে সমস্যা নেই বা তা অবৈধ নয়; অপরদিকে ওয়ালিয়ে ফকিহ অর্থ্ নৈতিক সঙ্কট এবং সমাজের মানুষের দুর্গ্ তির কথা বিবেচনা করে যে কোন প্রয়োজনীয় দ্রব্য -যদিও তা খাদ্যদ্রব্য না হয়- মজুত করা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন, তাহলে ওয়ালিয়ে ফকিহর নির্দেশই কার্য্ কর হবে এবং তা পালন করা সকল মার্জার মুকাল্লিদের ওপর অপরিহার্য্ হবে। এক্ষেত্রে পূর্ণ্ যোগ্যতার মুজতাহিদ (ইজতিহাদের জন্য আবশ্যক সকল বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ফকিহ) শাসকের নির্দেশ লঙ্ঘন করা, অন্য কোন মুজতাহিদ ও ফকিহর জন্যও জায়েজ নয়, তবে যদি তাঁরা নিশ্চিত হন যে, তিনি ইজতিহাদে ভুল করেছেন তবে ভিন্ন কথা। (সাইয়েদ কাজেম তাবাতাবায়ী ইয়াজদি, ওরওয়াতুল উসকা, ১ম খণ্ড, পৃ. ৫৭)